জিরো বাউন্ডারি কবিতার তৃতীয় বর্ষ/ দ্বিতীয় সংখ্যার জন্য লেখা জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখ। দুটো কবিতা বা কবিতা বিষয়ক মৌলিক লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ইমেলে-0boundarykabita17@gmail.com

ব্লগে অনুসন্ধান করুন

রুমা ঢ্যাং অধিকারী




সম্পাদকীয়
==================================


"কেউ বা মরে কথা বলে,  আবার
  কেউ বা মরে কথা না বলে"                   [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]

উক্তিটিকে যদি এইভাবে পড়ি যে -- কেউ কেউ মরে গিয়ে কথা বলেন আবার কেউ কেউ মরে গিয়ে কিছুই বলেন না -- তাহলে কী খুব কিছু ভুল বলা হবে! 

মৃত্যু এক অমোঘ ডেডলাইন, এক নিঃশব্দ অনুভূতি -- যা অত্যন্ত সহজভাবে আসে আবার কখনো আসেও না। এ এক বিচ্ছেদ - একটি ফুরিয়ে যাওয়া বেলার শুরু। কিন্তু কবি লেখকদের মৃত্যু কি আদৌ হয়!  এই নিয়ে শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে অনেক কবিই তো তার লেখার মাধ্যমে অমর হবার বাসনাকে প্রতিস্থাপিত করে গেছেন।  আবার তারাই পাঠকদের তৃপ্তির আস্বাদ দিতে চেয়ে একটি জীবনের নানান অধ্যায় পার করে গেছেন। সবারই কি তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর লেখার সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে? এর উত্তর সবারই কম বেশি হয়তো জানা।  এইতো হাতের কাছেই আপনি এবার কবি জীবনানন্দ দাশকে টেনে আনবেন,  যিনি বেঁচে থাকাকালীন নিজের কবিতা কিছুমাত্র মূল্যায়ন দেখে যেতে পারেননি। অথচ তাঁর মৃত্যুর অনেক বছর পর থেকে এমনকি এখনও কি ভীষণভাবে মূল্যায়িত হয়ে চলেছে। তেমনি আমরা ইংরেজি সাহিত্যের কবি জন কিটসকেও তো আনতে পারি, যিনি রোমান্টিক যুগের শেলি বায়রনের পাশাপাশি একজন ছিলেন,  সুন্দরের পূজারি হিসাবে যাকে আমরা মনে রেখেছি, যিনি প্রথম জীবন শুরু করেছিলেন চিকিৎসাশাস্ত্রের পেশা দিয়ে। কিন্তু কবিতা তাকে তাঁর পেশা ছাড়িয়ে কালজয়ী সব লেখা লিখিয়ে নিয়েছে যা ২০০ বছর পরও সমানভাবে সমাদৃত। যদিও তাঁর সাহিত্যজীবন বেশিদিনের জন্য নয় তবু চারবছর তিনি অনন্য কাব্যরস দিয়ে গিয়েছিলেন এবং তার মৃত্যুর মাত্র চার বছর আগে তার সৃষ্টিগুলো প্রকাশিত হয় যেগুলো তৎকালীন সমালোচকদের দৃষ্টিতে খুব একটা উচ্চ মর্যাদা পায়নি। তার মৃত্যুর পর তার কবিতাগুলো সঠিক মূল্যায়ন পেতে শুরু করে এবং উনিশ শতকের শেষ দিকে তিনি অন্যতম জনপ্রিয় ইংলিশ কবির স্বীকৃতি পান।
আপনি হয়তো ভাবছেন আজ কেনো এই রচনা লিখতে বসলাম। তাহলে বলি এই সৌন্দর্য ও নান্দনিক কবিতাগুলোর জনক জন কিটসের আজ ২২৪ তম জন্মদিন। এতগুলো বছর পরও ইংরেজি সাহিত্য পড়তে গেলে জানতে গেলে আজও যাঁকে না জানলে হয় না। তাঁকেই শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার এই লেখার উদ্দেশ্য। আজ আরেকবার তাঁর সৃষ্টিকে আমরা পড়ে নিতে পারি না!  

কিটসকে আমরা সৌন্দর্যের পূজারী হিসাবে জানলেও তাঁর কবিতাগুলো আসলে দর্শন, কল্পনা ও ভাববাদের মিশ্রিতরূপ। তার নিখাদ কল্পনা, মায়াবী ইংল্যান্ডের প্রকৃতি, তাঁর নরম হৃদয়ের ব্যঞ্জনা, স্মৃতি কাতর মন, বাস্তব থেকে পালানোর মনোভাব, একের পর এক মানসিক আঘাত, না পাওয়া প্রেমিকা ফেনি ব্রনের প্রতি গভীর আসক্তি, সামাজিক অসঙ্গতি, দুর্নিবার আবেগ-আকাঙ্ক্ষা, বাবা, প্রিয় ভাই টমের অকাল মৃত্যু তার হৃদয়কে এত বেশি বিদীর্ণ করেছিল যে তিনি ভেতর থেকে খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়েন আর সত্য জগৎ ছেড়ে কল্পনায় সেসব আঁকড়ে ধরে পাবার চেষ্টা তাঁকে আসলে ভাবের জগতে আরও নিমজ্জিত করে। 'ইন্ডিমিয়ন' কবিতাটার শুরু যদিও সুন্দরের কথা বলে কিন্তু এই কবিতার পাশাপাশি যদি দেখি তাহলে 'হাইপেরিয়ান' কাব্য এবং ওডগুলো গ্রিক চরিত্র ও মিথে ভরপুর।  'ওড টু সাইকি"তে যেমন বাস্তব থেকে দূরে গিয়ে কল্পনাপ্রসূত সৌন্দর্যপরায়ন কিটসকেই আমরা পাই যেখানে ভালোবাসার দেবতা কিউপিড সাইকির দুই প্রেমাত্মা আমাদের রাধাকৃষ্ণের কথা মনে করায়।  আবার 'ওড অন আ গ্রেসিয়ান আর্নে এক কলস জাতীয় পাত্রের ওপর চিত্রিত ছবি দেখে সেখানে কবি যে সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছেন তাকে তিনি অক্ষয় বলেছেন সেসব ফ্রোজেন গ্রামবাসী, পাইপার ও তার প্রেমিকা, অঙ্কিত বসন্তঋতুকে তাঁর বাস্তবের থেকে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও দীর্ঘস্থায়ী মনে হয়েছে। তিনি গ্রেসিয়ান আর্নকে একটি নিঃশব্দের চিরকুমারী করে দেখেছেন, দেখেছেন শিল্পে স্থাপিত প্রেমের অমরত্ব। শুধু সৌন্দর্যায়ন নয় তাঁর কবিতা বিশেষ করে ওডগুলো পড়লে আমরা প্রেমে আকাঙ্ক্ষিত এক কবিকেই পাই যিনি ফ্যানি ব্রাউনকে না পাওয়ার  যন্ত্রণালব্ধ শব্দকেই প্রতিস্থাপিত করেছেন। "ওড টু মেলানকলি"তে কিটসের বাস্তব ও কল্পনার দ্বন্দ্বে নতুন মাত্রা পাওয়া যায় যেখানে বেদনা বুঝতে কিটস বেদনার কাছে যেতে নিষেধ করেন বরং দুঃখ বুঝতে আনন্দের কাছে যেতে বলেন। এটা একটা দারুন সত্য কারণ যে আনন্দ আজ আছে তা কিছুক্ষণ পরেই হারিয়ে বেদনায় নুয়ে পড়ে। আনন্দ ক্ষণস্থায়ী আর বেদনা চিরন্তন। এখানেই কবির দার্শনিকতা দেখা যায়। কিটসের শ্রেষ্ঠতম কবিতা "ওড টু আ নাইটিংগেল"। গ্রিক মিথকে বাস্তবের সাথে মিশিয়ে কবি পরাবাস্তবতাকে অদ্ভুত এক রহস্যময় আবেশে জড়িয়ে লিখেছিলেন একটি নাইটিংগেলের গান কিভাবে আফিম খেয়ে বিস্মৃতির লিদ নদীতে কবিমন ডুবে যেতে চায়।  কিটস বলেছেন- ‘কী ব্যথা হৃদয়ে বাজে! সেই সঙ্গে অবশ আবেশ/ চেতনা জড়ায়ে আনে কোন বিষ করেছি কি পান/ অথবা আফিমের সুরাপাত্র করেছি নিঃশেষ।’ এভাবেই কবি নাইটিংগেলের গানকে ব্যথানাশক করে তার সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করেছেন। শেলির কাছে লেখা এক চিঠিতে একবার লিখেছিলেন -  ‘আমার কল্পনা হলো এক দেবালয়, আমি তার পুরোহিত।’ নিজে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়েও বলতেন বিজ্ঞানের তথ্য আমাদের কল্পনাকে থামিয়ে দেয়, আমরা হারিয়ে ফেলি কল্পনার যাবতীয় সৌন্দর্যবোধ। লামিয়াতে রামধনু নিয়ে যেকথা তিনি বলেছিলেন তা হলো রামধনু তৈরি হওয়ার কার্যকারণটি জেনে ফেললে তা দেখে মুগ্ধ হওয়া আর হয়ে ওঠে না। এখানেও কবি নাইটিংগেলের গানকে চিরস্থায়ী গান হিসাবে দেখেছেন। তবে ‘ বিদায়, বিদায় মায়া আর বিভ্রান্ত করবে না আমাকে।’ এইভাবে তাঁর চিন্তার পরিবর্তন হয় কল্পনাকে বিদায় জানিয়ে এবং ভঙ্গুরতাকে,  হতাশাকে স্থাপিত করে যিনি মৃত্যুর কয়েকবছর আগেই নিজের মৃত্যুশমন পেয়েছিলেন মুখ থেকে উঠে আসা রক্তের নমুনা দেখে। জেনে গেছিলেন মারণরোগ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হবেন এবং সেই রোগেই আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২৬ বছর বয়সে মারা যান। বেঁচে থাকাকালীন সমালোচকদের তীব্র সমালোচনা তাঁকে বিদ্ধ করে কিন্তু দৃঢ়ও করে। কিটসের মধ্যেই পাই কল্পনা-বাস্তবতা, স্থায়ী-অস্থায়ী, জীবন ও শিল্প, বস্তু ও চেতনার দ্বন্দ্ব এবং এক বন্ধন। জীবন তো ছোট বিশেষ করে কিটসের জীবন ক্ষণস্থায়ী। জীবন হতে পারে মরণশীল কিন্তু তাৎপর্যহীন কেন হবে!  মৃত্যু যেমন সত্য এবং অমোঘ তেমনি জীবনেরও দাম আছে ভারী। জীবনের এই যে ভারসাম্য এটাই তাঁর কাব্যিক দর্শন। কিটস যাঁর কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও মুগ্ধ ছিলেন তাঁকে নিয়ে লেখা এই ছোট পরিসরে সম্ভব হয় না।  বিন্দুমাত্র তুলে ধরার প্রয়াস শুধু। এখনও সিন্ধু বাকি রয়ে গেল।  পরে আবার হয়তো কোনোসময়ে লেখা যাবে। এখন "ওড টু নাইটিংগেল" কবিতাটির হুমায়ুন আজাদের অনুবাদটি পড়া যাক --


    নাইটিংগেলের  প্রতি 
   অনুবাদ -  হুমায়ুন   আজাদ 

                                        ১

আমার  হৃদয়  ব্যথা  করছে ,  আর  নিদ্রাতুর  এক  বিবশতা  পীড়ন  করছে
আমার  ইন্দ্রিয়গুলোকে ,  যেনো  আমি  পান  করেছি  হেমলক  ,
কিংবা  সেবন  করছি  কোনো  অসহ্য  আফিম
     এক  মুহূর্ত  আগে  ,  আর  ভুলে  গেছি  সব  :
এমন  নয়  যে  আমি  ঈর্ষা  করছি  তোমার   সুখকে  ,
     বরং   তোমার   সুখে   আমি   অতিশয়   সুখী --
আর  তুমি  ,  লঘু - ডানা   অরণ্যের   পরী  , সবুজ  বিচের   মধ্যে
     কোনো   সুরমুখরিত   স্থলে  ,  অসংখ্য   ছায়ার   তলে  ,
সহজিয়া   পূর্ণ   কণ্ঠে   গেয়ে  যাচ্ছো  গ্রীষ্মের    সঙ্গীত  ৷ 

                         ২
আহা  ,  এক  ঢোক  মদের  জন্যে  !  গভীর   মাটির   তলে 
     বহুকাল   ঢাকা  থেকে   যেই   মদ   হয়েছে   শীতল  ,
দেহে   যার   পুষ্প   আর   গেঁয়ো  সবুজের   স্বাদ  ,
      নাচ ,  আর   প্রোভেন্সীয়   গান  ,  আর   রোদে   পোড়ার   উল্লাস  !
আহা  ,  উষ্ণ   দক্ষিণভরা   একটি   পেয়ালার   জন্যে  ,
      পরিপূর্ণ   খাঁটি  ,  রক্তাভ   হিপ্পোক্রেনে  ,
কানায়   কানায়   উপচে   পড়েছে   বুদ্বুদ  ,
       এবং   রক্তবর্ণরাঙা   মুখ   ; 
যদি  পান  করতে  পারতাম  ,  আর  অগোচরে   ছেড়ে  যেতে  পারতাম  পৃথিবী  ,
      এবং   তোমার   সঙ্গে   মিলিয়ে  যেতে   বনের   আঁধারে 

                                  ৩  
মিলিয়ে   যেতাম  দূরে  ,  গলতাম  ,  এবং   যেতাম  ভুলে
     যা  তুমি   পত্রপল্লবের   মধ্যে   কখনো   জানো   নি  ,
ক্লান্তি  ,  জ্বর  ,  এবং   যন্ত্রণা 
     এখানে  ,  যেখানে   মানুষেরা   ব’সে   শোনে  একে  অন্যের   আর্তনাদ  ;
যেখানে   পক্ষাঘাতগ্রস্তের   মাথায়  কাঁপে  গুটিকয়  ,  বিষণ্ণ , অবশিষ্ট  শাদা  চুল  ,
     যেখানে  বিবর্ণ  হয়  যুবকেরা ,  আর  প্রেতের  মতোন  কৃশ  হ’য়ে  মারা  যায়  ;
যেখানে   ভাবতে  গেলেই   ভ’রে   উঠতে   হয়   দুঃখে 
     এবং   সীসাভারী   চোখের   হতাশায়  ,
যেখানে   সৌন্দর্য   রক্ষা   করতে   পারে   না   দ্যুতিময়   চোখ ,
    অথবা   আজকের  প্রেম   ক্ষয়   হয়   আগামীকাল   আসার   আগেই   ৷

                                    ৪
দূরে  !  আরো  দূরে  !  কেননা   তোমার   কাছে   উড়ে   যাবো  আমি  ,
     তবে   বাক্কাস   ও  তার   চিতাদের   রথে   চ’ড়ে    নয়  ,
যাবো   আমি   কবিতার   অদৃশ্য   ডানায়  ,
     যদিও   অবোধ   মগজ   কিংকর্তব্যবিমূঢ়   ও   বিবশ  :
এর  মাঝেই   তোমার   সঙ্গে   আমি  !   সুকোমল  এই   রাত  ,
      এবং   দৈবাৎ   চন্দ্ররানী   উপবিষ্ট   তার   সিংহাসনে  ,
তাকে   ঘিরে   আছে   তার   সব   তারার   পরীরা  ;
      কিন্তু   এখানে   কোনো   আলো   নেই  ,
শুধু   সেইটুকু   ছাড়া   যেটুকু   আকাশ   থেকে   বাতাসে   উড়াল   দিয়ে 
      শ্যামল   আঁধার  আর  শ্যাওলার   আঁকাবাঁকা  পথ  বেয়ে  এখানে  এসেছে  !  

                                   ৫
দেখতে   পাচ্ছি  না   আমি   আমার   পায়ের  কাছে  ফুটছে  কী   ফুল  ,
     বা  কোনো  কোমল   গন্ধ  ঝুলে   আছে   শাখায়   শাখায়  ,
তবে  ,  সুবাসিত  অন্ধকারে  ,  অনুমান   করি  প্রত্যেক   মধুকে
      যা  দিয়ে   এই   কুসুমের   মাস  ভ’রে  দেয়
ঘাস  ,   ঝোপ  ,  আর   বুনো   ফলের   গাছকে   ;
     শুভ্র   হথর্ন  ,   আর   বন্যগোলাপ  ;
পাতার   আড়ালে   দ্রুত   বিবর্ণ   ভাইওলেটরাশি  ;
     আর  মধ্য- মের   জ্যেষ্ঠ   সন্তান  ,
শিশিরের   মদে   পূর্ণ   আসন্ন   কস্তুরিগোলাপ  ,
     গ্রীষ্মের   সন্ধ্যায়   মৌমাছির   গুঞ্জরণমুখর   আবাস  ৷

                            ৬
অন্ধকারতলে   আমি   শুনি  ;  কেননা   অজস্রবার
     জড়িয়ে   পড়েছি   আমি   সহজ  মৃত্যুর   আধোপ্রেমে  .
প্রিয়  নাম  ধ’রে  তাকে  কতোবার  ডেকেছি   কবিতার  পংক্তিতে  ,
     আমার  নিঃশব্দ   নিশ্বাস   বাতাসে   মিলিয়ে   দেয়ার  জন্যে  ;
যে - কোনো  সময়ের  থেকে  এখন  মৃত্যুকে  মনে  হচ্ছে  বেশি   বরণীয়  ,
      ব্যথাহীন  থেমে   যাওয়া   এই   মধ্যরাতে  ,
যখন   তোমার   আত্মা   ঢেলে   দিচ্ছো   তুমি
      এরকম   তুরীয়   আবেগে   !
তারপরও  গেয়ে  যাবে  তুমি  ,  এবং  আমার  কানে  সাড়া  জাগবে  না --
     তুমি  গাইবে  প্রার্থনাসঙ্গীত   আমি  মিশে   যাবো  তখন   মাটিতে  ৷
        
                                        ৭
মৃত্যুর  জন্যে  জন্ম  হয়  নি ,  মৃত্যুহীন   পাখি  !
     কোনো   ক্ষুধার্ত  প্রজন্ম   ধ্বংস   করতে   পারবে  না   তোমাকে  ;
যে- সুর  শুনছি  আমি  ক্ষয়িষ্ণু  এ- রাতে  সে - সুরই
     সুপ্রাচীন  কালে   শুনেছিলো   সম্রাট   ও  ভাঁড়েরা  :
হয়তো  এ- একই  গান  ঢুকেছিলো
     রুথের  বিষন্ন  হৃদয়ে  ,  যখন  ,  স্বদেশকাতর  ,
অশ্রুভারাতুর  সে  দাঁড়িয়েছিলো   বিদেশি  জমিতে  ;
       একই   গানে   বারবার
মুগ্ধ   হয়েছে   ভয়ঙ্কর   সমুদ্রের  ফেনপুঞ্জের  দিকে   খোলা 
যাদুবাতায়ন  ,  পরিত্যক্ত   পরীদের  দেশে   ৷

                           ৮
পরিত্যক্ত  !   এ- শব্দ  ঘন্টাধ্বনির  মতো  আমাকে  জাগিয়ে 
     তোমার   নিকট  থেকে   পৌছে   দেয়   নিজেরই   কাছে  ৷
বিদায়  !  কল্পনাও   তার   খ্যাতি  অনুসারে
      প্রতারণা   করত   পারে  না  ,  প্রতারক   পরী  ৷
বিদায়  !   বিদায়  !  তোমার  করুণ  গান  মিশে  যাচ্ছে
নিকট   বনভূমিতে  ,  স্তব্ধ   নদীর   ওপরে  ,
     পাহাড়ের  ঢালে   ;  এবং  এখন  মিশে  গেছে 
পার্শ্ববর্তী   উপত্যকার   উন্মুক্ত   ভূমিতে  :
      এটা  কি   কস্পনা   ছিলো  ,  না  কি   ছিলো   জাগ্রত   স্বপ্ন  ?
পালিয়েছে   সে - সঙ্গীত  : -- আমি  কি   জেগে  আছি  না  কি   নিদ্রিত  ?

গত শারদীয়া উৎসবের আমেজ এখনও কাটেনি আর সবেমাত্র শত বিরক্তি নিয়ে কাজকর্মেও যোগ দিতে হয়েছে সবাইকে। আমরাও তাই এগিয়ে এলাম কাজে। কাজই একমাত্র সত্য ও সুন্দর, কাজই একমাত্র পরিচয়। এবারের সংখ্যায় অনুবাদ কবিতা সংযোজিত হয়েছে আশা করছি সবারই ভালো লাগবে। অন্যান্য সংখ্যাগুলোর মতোই এবারেও অনেক লেখা এসেছে তারমধ্যে থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে কিছু কবিতাকে মনোনীত করা হয়েছে। যাদের লেখা মনোনীত হলো না আগামী দিনগুলোতে আশা রাখি তাদের কবিতার উত্তরণ ঘটবে এবং এই ম্যাগাজিনেরই আগামী সংখ্যাগুলোতে দেখতে পাবো। 

সবাইকে গত উৎসবের ও আসন্ন ছটপুজোর জন্য শুভেচ্ছা জানাই। উৎসব শেষ হলেও কবিতার উৎসব সীমাহীন। আসুন কবিতায় মাতি, পড়ি ও পড়াই আবার তেমনি বলি নিজে ভালো থাকুন শরীরে ও মনে এবং অপরকেও ভালো রাখুন।  






No comments:

Post a Comment