জিরো বাউন্ডারি কবিতার তৃতীয় বর্ষ/ দ্বিতীয় সংখ্যার জন্য লেখা জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখ। দুটো কবিতা বা কবিতা বিষয়ক মৌলিক লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ইমেলে-0boundarykabita17@gmail.com

ব্লগে অনুসন্ধান করুন

আশরাফুল মন্ডল





তোড়ায় বাঁধি ঘোড়ার ডিম
==================================

১)

যেতে যেতে দেখা। রগচটা ছায়াপথের সঙ্গে।মন্থর শলাপরামর্শ বাড়িয়ে দিচ্ছে বুড়ো আঙুল। কী ভীষন আতপ উল্লাসে তারাদের চেয়ে থাকা। কচি ঢ্যাঁড়সের মতো কিছু সতেজতা জিইয়ে রাখা আছে। লাফালাফির ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে অস্থিরতার পাঁচালি।
বড় অসময় হে বংশীবদন। তোমার চালাঘর তো কাঁপছে। ঠ্যাং দুটোও তো কাঁপছে তোমার। আমারও। মায়ের ভোগে চলো ঝাঁপ দিই গুষ্ঠিশুদ্ধু।


২)

বাঁশপাতা ডাঁই জমা করা অভিমান ডেঙিয়ে যাচ্ছে। সমবেত সারমেয়দের কোরাসে সরোদের সুর ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসছে। চকমকি জ্বলা শীতের রাতে গড়াগড়ি খাচ্ছে লক্ষ্মীদেবীর পায়ের পাঁজ। ক্যানভাসের গা ভর্তি বাটি বাটি চায়ের ধোঁয়া। হুজুর প্রশ্নহীন আনুগত্য আপনার মসনদের চারপাশে। মেরুদন্ড বন্ধক নিয়েছে করাতকল। চাপরাশি হয়ে জনমত পাঁয়তারা ঢাকছে। ইচ্ছা অনিচ্ছারা এতদিন তুষের আগুনে খড় গুঁজে দিত। এখন তিন অক্ষর "কেয়াবাত"। চলো আমরা তেল মাখাই।


৩)

গায়ে গতরে উল্কি আঁকি। উঁহু ট্যাটু। স্পোকেন ইংলিশে জিভের অনবরত ওঠানামা। ভাষাপ্রেম কবরে শুয়ে। উচ্চারণ লন্ডভন্ড। ভাষা বোঁ বোঁ ঘুরছে। কোথায় চরকি থামবে সেকথা অজানা  আম আদমির। ঘুরন্ত চরকির থামার অপেক্ষায় আছি। তারপর বাতেলা যাবে থিতিয়ে। আমার ভাষা তোমার ভাষা কী আজকের!রক্ত ঝরেছে, মুখে উঠেছে ফেনা। ক্লান্ত রংচটা ভাষা ঠাঁই পায় নি স্বাধীন দেশের রাজ দরবারে। অতএব "এহো বাহ্য"। এসো ভাইয়োঁ বহেনো আমরা খই ভাজি.....


৪)

সংশয়ের পারদ ওঠানামা করছে। বোধহয় তুমি খিলাড়ি বড়ই। কাকে আঘাত করবে তুমি নিজেই কি জানো! কাবুকি থিয়েটারের চরিত্রের মতো বিনি তরোয়ালেই তলোয়ার ঘোরানোর ভান করছো। ভীতু, ফন্দিফিকিরবাজ কিছু চামচিকে শীৎকার করছে গলা ফাটিয়ে। হাততালিতে সরগরম তোমার দিনলিপি। আগুন জ্বালিয়ে ভূত চিনে নেওয়া যায়। ভূতনাথকে চেনা সহজ নয়। একে তো আদ্যিকালের বদ্যিবুড়ো, তারউপর "ব্যোমভোলে"! হে অনন্ত পগার পেরিয়ে আসা বাবামহ গঞ্জিকায় টান দাও। ভোলে বাবা পার করেগা।


৫)

নাবালক প্রশংসা হামাগুড়ি দিয়ে ননীর হাঁড়ি সাবাড় করছে। ফিঙে বুলবুলি দ্বীপান্তরে জারোয়াদের সঙ্গে সহবাসে রোদ্দুর কুড়োচ্ছে। তুমিও যেমন নড়বড়ে সেতুটির প্রহর গুনছ। আমড়া কাঠের ঢেঁকিতে পাড় দিচ্ছে ভক্তের আকুতি। ঈশ্বর সীমান্তে দাঁড়িয়ে মহাকালের লাইসেন্স চেক করছেন। আর এক্কাদোক্কার তুর্কি নাচনে হরপ্পা সভ্যতার অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসছে। দেশি মদের নেশায় বুদ হয়ে আমরা কথা বলার মাধ্যমের লাশ কাঁধে কবরডাঙার দিকে চলেছি। খাঁচা ইস্কুলের ঘুপচি কামরায় বন্দী আমাদের সন্ততিরা সেয়ানা হবার পাঠ মুখস্থ করছে। দিন বদলায়। খাঁচার দুয়ার তবুও খোলে না। খাঁচার ঘ্রাণ মগজে নিয়েই পাড়ি দেব ইংলিশ চ্যানেল। সামনেওয়ালা ভাগো.....


৬)

রোজনামচার মড়কচায় চুপি চুপি জ্বল জ্বল করছে গুটিকয় ইঁদারা ভর্তি জন্মান্তর। রোগ শোক বাহিত কিছু প্রস্তাব খারিজ হয়ে ফ্যালফ্যাল চোখে সন্দেহের টিস টিস করা ফোঁড়াগুলো গিলে নিচ্ছে যেন। বাজখাঁই ইচ্ছেগুলো অনুলোম বিলোমে এখন মগ্ন। পথ দুমদাম পা ফেলে চমকে দেওয়ার স্বরলিপি রিভিউ করছে। বিদঘুটে রাত্তির মন্দাকিনীর স্রোতে চুবিয়ে নিচ্ছে গা। আশমানের বাদশাহী রোডে চলছে তারাদের ধূমধাড়াক্কা রুটমার্চ। যুদ্ধের প্রস্তুতি বলে কথা!


৭)

জটলা বাঁধছে তেঁতুলতলা।পাশেই বৃটিশ আমলের জলজ উদ্ভিদ বুকে জড়িয়ে রাখা এক পৃথুলা দীঘি।  সিরিয়াসলি গুজবে কান দেওয়া কিছু মৌমাছি মৌচাক ভেবে গুনগুন করছে দীঘিটির পাড়ে শুকনো গাছের কোটরে। একপায়ে দাঁড়িয়ে একটি বক একদৃষ্টে সুন্দরী মৌরলার আড়নয়নে ঘোরাঘুরি দেখছে। দীঘিটির মাঝবরাবর একটি মাছরাঙা নিরামিষাশী ছিপছিপে কিশোরীর মতন মাসুম মুখে চক্কর দিচ্ছে। যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। কিছুটা দূরে সদ্য প্রসূতি সাততম বকনা বাছুরটির মা, সেই খয়েরী রঙের গাইগরুটি পরম সোহাগে বাছুরটির বুকে মুখে বুলিয়ে দিচ্ছে আদুরে জিভ। বাছুরটি না মানুষী ভাষায় আধো আধো আহ্লাদী স্বরে মা মা বলে ডাকছে।




3 comments:

  1. সব কবিতা গুলোর সুন্দর ভাবনার আঙ্গিকে প্রকাশ।

    ReplyDelete
  2. দারুণ লেখা । জিরো বাউন্ডারির যোগ্য

    ReplyDelete